শুভ বিজয়ার একাল সেকাল
মুছে যাওয়া দিনগুলি....
১৮/১০/২২
যখনেই কোন আনন্দ খুশির কথা মনে হয় তখন মনটা হুট করে চলে যায় সেই সূদূর ছোটবেলায়। আজও যখন বিজয়া দশমীর দিন মাকে বরণ করে ঘরে আসি তখন বহু বছর আগে ফেলে আসা দিনের কথা খুব মনে
পড়ে।চোখের উপর জ্বল জ্বল করে ভেসে উঠে দশমীর দিনের কথা, । সেকাল আর একালের মধ্যে অনেক
পরিবর্তন এসেছে। আমরাও হয়তো কোথাও না কোথাও একটু অলস হয়ে পড়ছি সকলকে দেখে বা সবকিছু না চাইতে পাওয়া যায় বলে হয়তো । আজকাল তো অনলাইনের যুগ।ঘরে বসেই এসে যায় ।
মহালয়া শেষ হলেই আমার মাকে দেখেছি খইয়ের মোয়া, মূড়ির মোয়া, নারকেলের নাড়ু কাটানিমকি ,, এইসব বানিয়ে রাখতে ,পূজোর সময় বাড়ীতে লোকজন আসলেই মিষ্টি আনা হতো না, এই সব দিয়ে চা দেওয়া হতো। পূজোর গন্ধ পাওয়া যেতো ।কত আন্তরিকতা ছিলো সবকিছুতে সময়ও ছিলো যথেষ্ট। এখনতো এইসবের বড্ড অভাব।
আজকাল আর সেসবের পাট চুকিয়ে ফেলেছে।সকলে Helth concious হয়ে গেছে, বেশি মিষ্টি খেতে চায়না বলে আর করা হয়না ,খেতে ইচ্ছে হলে বাজারে পাওয়া যায় ,,সেখান থেকে কিছু নিয়ে আসলেই হলো।
দশমীর কথা বলতে গেলে সেটাই বলতে হয় , অতীতের র বিজয়া দশমী আর এখনকার দশমীতে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে।সেই শান্তির জল অপরাজিতা সুতা আজ আর কোথাও দেখিনা । দুর্গা মায়ের বিসর্জনের পর পূজা মন্ডপে আমরা সকলে ছুটতাম শান্তির জল নেওয়ার জন্য। একটি ছোট শিশি মা আবার সাথে দিয়ে দিতো ।বাড়ীতে নিয়ে আসার জন্য , এই পবিত্র জল ঘরের চারিদিকে ছিটিয়ে দিয়ে সারাটা বছর ঘরের শান্তি বজায় থাকে যেনো এই কামনা করা হতো। অপরাজিতা সুতা মন্ত্র পড়ে তারপর একে অপরের হাতে সুতা বাঁধা, তারপর মিষ্টি খাওযানো হতো সেই কি আনন্দ।
দশমীর দিন দেখেছি মাকে বিকেল বেলায় অনেকটা ঘুগনি বানিয়ে রাখতো ,আর বাবাও অনেক জিলিপি খুর্মা সেসব নিয়ে আসতো।দশমীতে নাকি জিলিপি খেতে হয়,নাহলে শুভ বিজয়া মনে হয়না।আর বাজারেও দেখেছি খুব করে জিলিপি ভাজা হতো। সন্ধ্যারপর প্রণাম কোলাকুলি এইগুলো পর্ব চলতো।ঘর ভর্তি লোক , মা আমাদের বলতে হতো না বড়দের প্রণাম করার জন্য আজকাল তো বাচ্চাদের বলে বলে দিতে হয় , প্রণামের কথা।ঘাড়টা সহজে নামে না। সেসব দিনের কথা ভাবলে খুব কষ্ট হয় ।আজ আর কোথায় এইসব।
বিজয়ার পরের দিন দেখেছি বাবাকে বসে বসে চিঠি লিখতে। মামারবাড়ী , বাবার বন্ধুদের, আমাদের সকল আত্মীয় স্বজনের কাছে ।সাথে আমরাও একটু বকাঝকা খেতাম দু কলম লেখার জন্য। কত আন্তরিকতা স্নেহমাখা হাতের ছোঁয়ায় প্রতিটা চিঠির শব্দরা প্রাণ পেতো।
একালে শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় সবে চলে তবে সেটাতে কোন প্রাণ থাকে না,শুধু লোক দেখানো। ডিজিটেলের যুগ যেহেতু ,,এত সময় নেই কারও কাছে।মোবাইল নিয়ে সব কর্তব্য রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি।
যুগের সাথে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে,। দুর্গাপূজা আমাদের ঐতিহ্য।এই ঐতিহ্যকে কিছুটা ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের উপরেও নির্ভর করে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন